Wellcome to National Portal

উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ এর তথ্য বাতায়নে আপনাকে  স্বাগতম।

মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
রসুনের আগা মরা রোগ ও পাতা পচা রোগ থেকে মুক্তির উপায়
বিস্তারিত

রসুনের উৎপাদন প্রযুক্তি

মাটি ও জলবায়ু

          জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি রসুন চাষের জন্য ভাল। মাটির অমস্নতা ৬-৭ হলে সে মাটিতে রসুন ভাল হয়। তবে এটেল দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়। রসুন খুব শীত বা বেশি গরম সহ্য করতে পারে না। রসুন চাষের জন্য ঠান্ডা ও মৃদু জলবায়ু প্রয়োজন। রসুন গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং বাল্ব পরিপক্ক হওয়ার জন্য বড়দিন ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন।

জমি তৈরি

          ৬-৭ টি চাষদিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। এ সময় জমিতে আগাছা থাকলে বেছে পরিষ্কার করতে হবে। জমি সমতল করে বেড তৈরি করতে হবে। এবং এক বেড থেকে অন্য বেডের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫০ সেমি প্রশসত্ম নালা রাখা দরকার।

বিনা চাষে রসুন উৎপাদন

          বন্যা পস্নাবিত এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলে জমির আগাছা পরিষ্কার করে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে ধানের খড় দ্বারা মালচিং করা হয়। প্রয়োজনবোধে সেচ দেওয়া হয়। এভাবে বিনা চাষে রসুন উৎপাদন করা যায়।

রোপাণ সময় ও পদ্ধতি

          মধ্য-অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যমত্ম রসুনের কোয়া লাগানোর উপযুক্ত সময়। এর পর রসুন লাগালে ফলন খুব কম হয়। ৪ মিটার চওড়া এবং ১.৫ মিটার বেডে  (তৈরিকৃত) রো-কোদাল দিয়ে ২.৫-৩.০ সেমি গভীর নালা করে তার মধ্যে ১০ সেমি দূরে দূরে রসুনের কোয়া করতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ১০ সেমি।

বীজের হার

          রসুনের বীজ লাগানোর জন্য কোয়অ ব্যবহার করা হয়। পূর্ববর্তী বছরের উৎকৃষ্ট ফসল থেকে বড় বড় কন্দ বেছে বীজের জন্য হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি রসুনের কোয়া দরকার।

বীজের আকার

          গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ০.৭৫ গ্রাম থেকে ১.০ গ্রাম রসুনের কোয়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। তবে এর চেয়ে ছোট আকারের কোয়া রোপণ করলে ফলন হবে কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হবে না।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

          ফলন বেশি পেতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার প্রয়োগ ফলন বেশি হয়। রসুনের জন্য প্রতি হেক্টরে নিন্মোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম

সারের পরিমাণ/গাছ

গোবর

৫ টন

খৈল

৫ টন

ইউরিয়া

২১৭   কেজি

টিএসপি

২৬৭ কেজি

এমপি

৩৩৩  কেজি

জিপসাম

১১০ কেজি

 

সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমপি, জিপসাম এবং অর্ধেক ইউরিয়া জমি তৈরির সময় দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই কিসিত্মতে সমান ভাবে রসুন বপনের ২৫ দিন এবং ৫০ দিন পর পর দিতে হবে। এছাড়া ছাই প্রয়োগ করলে মাটি আলগা থাকে  এবং ফলন বেশি হয়।

আন্ত:পরিচর্যা

          রসুনের চারা বৃদ্ধির পর্যায় জমিতে আগাছা থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। কন্দ গঠনের আগ পর্যমত্ম ২-৩ বার নিড়ানি দিতে হবে। নিড়ানির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়। ৪-৫ সেমি পুরু করে কচুরিপানা বা ধানের খড় দ্বারা মালচ প্রয়োগ করলে রসুনের ফলন ভাল হয়। এই ক্ষেত্রে বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না। মালচ ছাড়া করলে জমির প্রকারভেদে ১৫-২০ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

 

অন্যান্য পরিচর্যা

রোগ ও পোকামাকড় দমন

          রোগ বালাইয়ের মধ্যে ব্লাইট, সফটরট, ড্যামিপিং অফ, ডাউনি মিলডিউ এবং পাতা ঝলসারো রোগ হয়। পাতা ঝলসানো রোগের ফলে পাতার উপর ছোটছোট সাদাটে গোল দাগ দেখা যায়। এ রোগের ফলে পাতা প্রথমে হলদে ও পরে বাদামী রং ধারণ করে পরে ও শুকিয়ে যায়। এসব রোগ দমনের জন্য বোর্দমিক্সার  (তুঁতেঃচুনপানি=১ঃ১ঃ১০০) বা  ডাইথেন এম-৪৫/রোভরাল ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন স্প্রে করে দমন করা যায়। অনেক সময়  পটাশিয়ামের অভাবে রসুনের পাতার  ডগা শুকিয়ে যায়।

          এ অবস্থা দেখা দিলে মূল সার হিসেবে পটাশিয়াম দেওয়া ছাড়াও পরবর্তীতে পটাশিয়াম সার দিলে ডগা শুকিয়ে যাওয়া রোধ করা যায়। রসুন সাধারণত থ্রিপস/চুষি পোকা, রেড স্পাইডার ও মাইট দ্বারা আক্রান্ত হয়। থ্রিপস পাতার রস চুষে খায় বলে পাতায় প্রথমে সাদা লম্বাটে দাগ দেখা যায় পরে পাতার অগ্রভাগ বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায় এবং পাতা মনে নলের মত আকার ধারণ করে। এসব পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিনয়ন/ডাইমেক্রন/ডডেডিস প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে স্প্রে করে সহজেই দমন করা যায়।

ফসল সংগ্রহ

          রসুন রোপনের দুই মাস পরে কান্দ গঠিত হতে থাকে। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পরে কন্দ পুষ্ট হতে শুরম্ন করে। ৪-৫ মাস পরে রসুন উত্তোলন করা যায়। পাতার অগ্রভাগ হলদে বা বাদামী হয়ে শুকিয়ে গেলে বুঝতে হবে রসুন পরিপক্ক হয়েছে। এছাড়া কন্দের বাহিরের কোয়াগুলি পুষ্ট হয়ে লম্বালম্বিভাবে ফুটে উঠে এবং দুই কোয়ার মাঝে খাঁজ দেয়া যায়। এ সময় রসুন তোলার উপযুক্ত হয়। গাছ হাত দিয়ে টেনে তুলে মাটি ঝেড়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর কন্দগুলি ৩-৪ দিন ছায়ায় রেখে শুকানোর পর গুদামজাত করা হয়।

গুদামজাতকরণ

          শুকনো রসুন আলো বাতাস চলাচলযুক্ত ঘরের শুকনা মাচায় বেনি করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এতে রসুন সবচেয়ে ভাল থাকে। এছাড়া হিমাগরে ০-২ সে. উত্তাপে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ আর্দ্রতায় রসুন ভালভাবে বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়।

 

ছবি
ডাউনলোড
প্রকাশের তারিখ
15/10/2017
আর্কাইভ তারিখ
31/05/2018